যারা গবেষণা করার ইচ্ছে পোষণ করেন, কিন্তু কিভাবে সেটা করবেন কুল-কিনারা করতে পারছেন না। তাদের জন্য এ লেখা। আর কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু সহজভাবে হঠাৎ মনে আসলো, কিন্তু পরে ভুলে যাওয়ায় মহা ঝামেলায় পড়তে হয়, সেজন্য এ লেখাটা ক্রমাগত চালিয়ে নেয়া, যাতে নিজেরও উপকার হয়।
গবেষণা আসলে মহা ধৈর্য্য আর কষ্টের কাজ। সুতরাং আপনাকে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে কাজে নামতে হবে। আপনি সময়, শ্রম, মেধা ও অর্থ ব্যয় করতে কোন কিপটেমি বা আলস্য করতে পারবেন না, তাহলে গবেষণার গরু খুজে পাবেন না। আসলেই এটা হারানো বস্তু খুঁজে বের করা এবং সত্যটাকে স্পষ্ট করা এবং সমাজের যাতে কোন কাজে লাগে সেটা বিবেচনায় নিয়ে তথ্য সংগ্রহ, মাঠ পর্যায় তথ্য অনুসন্ধান, বই, ক্যাটালগ, নমুনা, চিত্র, সাক্ষাতকার গ্রহণ ইত্যাদির মাধ্যমে গবেষণা প্রকল্পের ধরণ অনুযায়ী একটি অভিসন্দর্ভ রচনা করা মূল বিষয়।
আপনি যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জানেন এবং বিষয়টিকে ভালবাসেন, সেটা আপনার ক্যারিয়ারের সহায়ক হতে পারে বা না হতে পারে, কিন্তু দেশ জাতি ও মানবতা উপকৃত হবে, এটা আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে। যে দেশে যত বেশি গবেষণা হবে, সে দেশ তত এগিয়ে যাবে। এজন্য আপনাকে গবেষণা কর্মের মূল নীতিমালা জানতে হবে এবং এর টুকিটাকি অনুসরন করতে হবে। আপনি নেটে সার্চ দিয়ে মূলনীতি পেয়ে যাবেন এবং এ সংক্রান্ত বই কিনতে পাবেন। পুরোন বইয়ের বাজারে আপনাকে নিয়মিত যেতে হবে এবং এটা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। যেখানে আপনার গবেষণার তথ্য থাকতে পারে মনে করছেন, সেখানে না যাওয়া পর্যন্ত আপনি মনে তৃপ্তি পাবেন না, এ রকম বোধ আপনার গবেষণা কর্মকে বেগবান করবে। একটা তথ্যের জন্য আপনাকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়ার মানসিকতা যেমন রাখতে হবে, তেমনি বই-পত্র, সাময়িকী, নমুনা সংগ্রহে আপনাকে অকাতরে টাকা খরচের প্রস্তুতি থাকতে হবে।
বিশ্বের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কর্ম হয়ে থাকে। আপনি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গবেষণা করতে চাইলে, সেখানে নীতিমালা দেখে নিন, আপনি সেটার আওতায় পড়েন কি না। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং নীতিমালার শর্তগুলো পূরণ করে আবেদনের যোগ্য হলে, আপনার বিষয়ের একটি শিরোনাম ঠিক করে নিন, যেটা আগে কেউ করেনি, শিরোনাম ঠিক হলে একটা সার সংক্ষেপ তৈরি করে নিন, নেটে আপনি প্রচুর সংখ্যক সিনোপসিস বা সার সংক্ষেপ নমুনা পাবেন। আর এখন তথ্য প্রাপ্তির দিক দিয়ে ইন্টারনেট আপনাকে বিশাল সাপোর্ট দিবে, এ জন্য নেট থেকে তথ্য খুঁজে বের করার কাজে আপনাকে দক্ষ হতে হবে। তথ্য সংগ্রহ, বিন্যাস, যাচাই করণ এবং কম্পিউটার ব্যবহারে আপনাকে দক্ষ ও করিৎকর্মা হতে হবে। সার সংক্ষেপ তৈরি হলে, আপনাকে তত্ত্বাবধায়ক জোগাড় করতে হবে। এখানেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তবে হতাশ না হয়ে আপনাকে ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। স্বীয় ডিপার্টমেন্ট বা বিভাগ থেকে গবেষণা করা সহজ। তবে ভিন্ন বিভাগ থেকেও করা যায়, সেক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক রাজি হওয়াটা মূল বিষয়।
যাহোক আপনি গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করলেন, তত্ত্বাবধায়ক আপনাকে গবেষণার খুটিনাটি দেখাবেন আর আপনি তার কাছ থেকে যত বেশি নিতে পারবেন, আপনার কাজ তত সহজ হয়ে যাবে। তবে বই-পত্র ও আনুসাঙ্গিক বিষয়ে আপনাকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে, তা নাহলে কাজ শুরুর পর চারদিক অন্ধকার দেখা অনিবার্য হয়ে দাড়াবে। আপনি গবেষণা সহায়ক যে তথ্যই পান না কেন, সেটা নোট করে রাখবেন, আর বই ঘরে আনার পর সেটার একটা সার সংক্ষেপ করবেন, বইতে আপনার কাজে লাগার মত তথ্যগুলো পৃষ্ঠা নম্বরসহ নোট করবেন, যেটা কোট করতে হতে পারে বা অভিসন্দর্ভের কাজে লাগতে পারে বলে মনে করেন, সেটা হাই লাইট করে রাখবেন। মোট কথা গবেষণায় ব্যবহৃত বই-পত্তর আপনার নখ-দর্পণে থাকতে হবে।
ফিল্ড ওয়ার্ক বা মাঠ পর্যায়ের কাজে হয়ত মফস্বলে কোন ব্যক্তি, রিসোর্স পারসন বা লাইব্রেরি অথবা কোন পুরাকৃতি দেখতে এবং সেখান থেকে আপনাকে ছবি সংগ্রহ করতে হতে পারে, সেক্ষেত্রে ভাল পিক্সেলের ক্যামেরার একটা স্মার্ট মোবাইল এবং তাতে গবেষণা সহায়ক এ্যাপস নামিয়ে নিতে হবে, এ ছাড়া বেশি স্টোরেজের মেমরি কার্ড রাখতে হবে। মাঠ পর্যায়ের কাজে মনে করতে হবে, এখানে দ্বিতীয়বার আসার সুযোগ হয়ত হবে না, এজন্য পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে, কারণ আপনার গবেষণার সময় সীমিত।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলতি নিয়মে এবং আপনার বিশ্ববিদ্যালয় যে পদ্ধতিতে লেখা অভিসন্দর্ভ গ্রহণ করে সেটা জেনে নিতে হবে, তবে ব্যতিক্রমী বিন্যাসের এবং দৃষ্টি নন্দন দেখতে অভিসন্দর্ভ আপনাকে ভাইভা বোর্ডে এগিয়ে রাখবে পরীক্ষক মহোদয়গণের আনুকূল্য পেতে। কখনই অভিসন্দর্ভে কোন চালাকি বা ভুয়া রেফারেন্স দিবেন না, সৎ থাকবেন এবং নিজের মতকে বিনয়ের সাথে তুলে ধরবেন। মনে রাখবেন ভাইভা বোর্ডে আটকে গেলে আপনার পুরো গবেষণা কর্ম ব্যর্থ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আপনার তত্ত্বাবধায়ক হচ্ছেন আপনার রক্ষাকবচ, তিনি আপনার কাজে সন্তুষ্ট হলে আপনার ডিগ্রি হয়ে যাবে। কোন প্রশ্নের গোজামিল উত্তর ভুলেও দিতে যাবেন না। পরীক্ষকগণ আসলে যাচাই করতে চাইবেন যে অভিসন্দর্ভটি আপনার একান্ত পরিশ্রমের ফসল কি না, সুতরাং অভিসন্দর্ভের লাইন-বাই-লাইন এমন কি দাড়ি -কমা আর রেফারেন্স সম্পর্কে স্পষ্ট থাকতে হবে। রেফারেন্স বইয়ের লেখক সম্পর্কেও আপনার ধারণা থাকা প্রয়োজন। যে বই থেকে রেফারেন্স দিবেন, সেখানে লেখক যদি অন্য সোর্স কোট করেন, তখন আপনাকে মূল সোর্স দেখতে হবে। তথ্য ব্যবহারে আপনাকে সাবধান ও নির্মোহ হতে হবে, বায়াস তথ্য আপনার কাজ ও পরিশ্রম দুটোই ধ্বংস করে দিবে। সুতরাং একটি তথ্যের জন্য যত বেশি সোর্স পাবেন তত আপনার লাভ। একটা তথ্যও যেন ক্রস চেক ছাড়া ব্যবহার না হয়, সেটা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। গবেষণা কর্মে ব্যবহৃত ছবি আপনার নিজের সংগৃহীত হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং আপনার মোবাইলে তোলা ছবির মূল্য সবচেয়ে বেশি, যে ছবি আপনি নেট থেকে নিবেন সেটা ইউনিক এবং আপনার তথ্যের সাথে অপরিহার্য না হলে সেটা অবশ্যই বাদ দিবেন। আর ডায়াগ্রাম, লেখচিত্র ইত্যাদি অবশ্যই নিজে তৈরি করে দিবেন, কপি করবেন না। পরীক্ষক মহোদয় আপনার কাজকে ভাল করে যাচাই করবেন, সুতরাং আপনার সামান্য অসতর্ক পদক্ষেপ পুরো গবেষণাকে মাটি করে দেবে। ভাইভা বোর্ডে উৎরে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনি ডিগ্রি পেয়ে গেছেন, এরপর শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি থাকে। সুতরাং ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের আপনি সন্তুষ্ট করবেন আপনার আন্তরিকতা ও কর্ম দিয়ে, তত্ত্বাবধায়ক মহোদয় আপনাকে যে নির্দেশনা দিবেন, আপনি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন। সর্বোপরি আপনার কাজে সবসময় আল্লাহপাকের রহমত ও করুণা কামনা করবেন। আল্লাহপাক আপনাকে কামিয়াব করবেন।