জ্বীন নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা :
তিন.
খুলনাকে জ্বীনের নগরী বলে শৈশবে শুনেছি। মাদ্রাসার বোর্ডিংয়ে ভর্তির পর বিচিত্র ধরণের আর বৈশিষ্ট্যের ছাত্রের সাথে পরিচয় হল। তাদের ভাষার বৈচিত্র আমাকে মুগ্ধ করে। আমার রুমমেট আনিস ও আজিম বাগেরহাটের আর রুহুল রামপালের। রুহুল একদিন রাতে জ্বীনের গল্প বলল। সেরাতে আমরা ভয়ে ঘুমুতে পারছি না...মনে হচ্ছে এইবুঝি চেপে ধরে ঘাড় মটকে দেবে কেউ। রুহুলের গল্পের নায়ক আউয়াল মাঝি প্রায়ই নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আশপাশের লোকেরা বলে, জ্বীনের পিঠে চেপে সে হিল্লিদিল্লি যায়। সেই আউয়াল একদিন ফুটফুটে চাঁদের মত, মহল্লার লোকদের ভাষায় দুধে-আলতা পরীর মত বউ নিয়ে বাড়ীতে এল। সবাই চেপে ধরল, বউ পেল কোথায়? আউয়াল শ্বশুর বাড়ি বোম্বের কথা বলে আর বউ হিন্দিতে কথা বলে। মাঝি রাত করে বাড়ী ফিরে আবার কোন রাতে হয়ত আসে না। এদিকে মহল্লার জোয়ান ছেলেরা আউয়ালের বাড়ি অহেতুক ভীড় জমায়। তবে খুব তাড়াতাড়ি সেই ভীড় ভেঙ্গে গেল। হঠাত হঠাত আজব সব ঘটনা ঘটতে লাগল। মহল্লার সবচেয়ে দুষ্টু আর শয়তান ছমির একটু বেশি নজর দিয়েছিল। একদিন সকালে তাকে পগারের(মহল্লার পাশে ছোট বিল) ওপারে আকাশ ছোয়া তালগাছটার মাথায় পাওয়া গেল। গাছে বাশ লাগিয়ে তাকে নামানো হল। এবং পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানো হলে দেখা গেল, ছমিরের জবান বন্ধ। তার চোখে আতঙ্ক এবং সেদিন বিকেলে ছমির নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। ছমিরের সাঙ্গপাঙ্গ নেহায়েত কম ছিল না। আগের সন্ধ্যায় পগারপাড়ে নাড়ার ঘরে তাদের আড্ডায় যে অশ্লীল আলোচনা হইছিল আর ছমির যে ঘটনা ঘটাবার ইরাদা করেছিল, তার পরিণতি এতটা ভয়ঙ্কর হবে সেটা তারা মালুম করতে পারে নাই। তাদের বদখায়েশ উবে গেল আর নাড়ার ঘরের আড্ডাটাও ভেঙ্গে গেল। দুয়েক দিন পর শয়তান কিসিমের যে কেউ আউয়াল মাঝির বাড়ি মাড়াতে যায়...তাকেই হয় তাল গাছে নয়তো জংলার তেতুল গাছে পাওয়া গেল..এবং তারপর সে নিরুদ্দেশ। মহল্লায় দ্রুত আতঙ্ক গ্রাস করল। একদিন মাঝি বাড়ী পাশের সেক বাড়ীর মেয়ে জরিনা আগুন আনতে গিয়ে দেখে মাঝির বউ দুইপা চুলোয় পুরে ভাত রানছে। জরিনা ভীষন ভয় পেল এবং বাড়িতে এসে অজ্ঞান হল। দ্রুত এখবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল, মুরব্বিরা এর একটা বিহিত করতে বিকেলে মাঝির বাড়ি গিয়ে দেখল ঘরে তালা ঝুলানো। এ গল্পের কোন সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি এবং একবার রামপালে এক বন্ধুর বড়ভাইয়ের বিয়ে খেতে গিয়েছিলাম, সারাদিন ভালই কেটেছিল কিন্তু রাতে ঘুমুতে খুব ভয় লেগেছিল। গোলপাতার ঘরে জাফরি কাটা বাশের বেড়া, খোলা প্রান্তরের বাতাস রাতে শো শো আওয়াজ তুলে ঘরের বেড়া আর চালে ধাক্কা মারে। দূরের গাছে রাতজাগা পেচার করুন চিতকার যেন পরিবেশকে ভয়পুরি বানিয়ে ফেলছে। (চলবে)
খুলনাকে জ্বীনের নগরী বলে শৈশবে শুনেছি। মাদ্রাসার বোর্ডিংয়ে ভর্তির পর বিচিত্র ধরণের আর বৈশিষ্ট্যের ছাত্রের সাথে পরিচয় হল। তাদের ভাষার বৈচিত্র আমাকে মুগ্ধ করে। আমার রুমমেট আনিস ও আজিম বাগেরহাটের আর রুহুল রামপালের। রুহুল একদিন রাতে জ্বীনের গল্প বলল। সেরাতে আমরা ভয়ে ঘুমুতে পারছি না...মনে হচ্ছে এইবুঝি চেপে ধরে ঘাড় মটকে দেবে কেউ। রুহুলের গল্পের নায়ক আউয়াল মাঝি প্রায়ই নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আশপাশের লোকেরা বলে, জ্বীনের পিঠে চেপে সে হিল্লিদিল্লি যায়। সেই আউয়াল একদিন ফুটফুটে চাঁদের মত, মহল্লার লোকদের ভাষায় দুধে-আলতা পরীর মত বউ নিয়ে বাড়ীতে এল। সবাই চেপে ধরল, বউ পেল কোথায়? আউয়াল শ্বশুর বাড়ি বোম্বের কথা বলে আর বউ হিন্দিতে কথা বলে। মাঝি রাত করে বাড়ী ফিরে আবার কোন রাতে হয়ত আসে না। এদিকে মহল্লার জোয়ান ছেলেরা আউয়ালের বাড়ি অহেতুক ভীড় জমায়। তবে খুব তাড়াতাড়ি সেই ভীড় ভেঙ্গে গেল। হঠাত হঠাত আজব সব ঘটনা ঘটতে লাগল। মহল্লার সবচেয়ে দুষ্টু আর শয়তান ছমির একটু বেশি নজর দিয়েছিল। একদিন সকালে তাকে পগারের(মহল্লার পাশে ছোট বিল) ওপারে আকাশ ছোয়া তালগাছটার মাথায় পাওয়া গেল। গাছে বাশ লাগিয়ে তাকে নামানো হল। এবং পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানো হলে দেখা গেল, ছমিরের জবান বন্ধ। তার চোখে আতঙ্ক এবং সেদিন বিকেলে ছমির নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। ছমিরের সাঙ্গপাঙ্গ নেহায়েত কম ছিল না। আগের সন্ধ্যায় পগারপাড়ে নাড়ার ঘরে তাদের আড্ডায় যে অশ্লীল আলোচনা হইছিল আর ছমির যে ঘটনা ঘটাবার ইরাদা করেছিল, তার পরিণতি এতটা ভয়ঙ্কর হবে সেটা তারা মালুম করতে পারে নাই। তাদের বদখায়েশ উবে গেল আর নাড়ার ঘরের আড্ডাটাও ভেঙ্গে গেল। দুয়েক দিন পর শয়তান কিসিমের যে কেউ আউয়াল মাঝির বাড়ি মাড়াতে যায়...তাকেই হয় তাল গাছে নয়তো জংলার তেতুল গাছে পাওয়া গেল..এবং তারপর সে নিরুদ্দেশ। মহল্লায় দ্রুত আতঙ্ক গ্রাস করল। একদিন মাঝি বাড়ী পাশের সেক বাড়ীর মেয়ে জরিনা আগুন আনতে গিয়ে দেখে মাঝির বউ দুইপা চুলোয় পুরে ভাত রানছে। জরিনা ভীষন ভয় পেল এবং বাড়িতে এসে অজ্ঞান হল। দ্রুত এখবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল, মুরব্বিরা এর একটা বিহিত করতে বিকেলে মাঝির বাড়ি গিয়ে দেখল ঘরে তালা ঝুলানো। এ গল্পের কোন সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি এবং একবার রামপালে এক বন্ধুর বড়ভাইয়ের বিয়ে খেতে গিয়েছিলাম, সারাদিন ভালই কেটেছিল কিন্তু রাতে ঘুমুতে খুব ভয় লেগেছিল। গোলপাতার ঘরে জাফরি কাটা বাশের বেড়া, খোলা প্রান্তরের বাতাস রাতে শো শো আওয়াজ তুলে ঘরের বেড়া আর চালে ধাক্কা মারে। দূরের গাছে রাতজাগা পেচার করুন চিতকার যেন পরিবেশকে ভয়পুরি বানিয়ে ফেলছে। (চলবে)