Thursday, November 29, 2018

Momin Maszid : A wooden heritage of south Asia part-2

Momin maszid is contents of beautiful wooden carving arabic calligraphy.

page 14


page 15


page 16


page 17
page 18


page 19
page 20


page 21


page 22


page 23


page 24


page 25


back page

Momin Maszid : A wooden heritage of south Asia

It is a document of age of century anniversary of Momin maszid of Bangladesh.


cover page of the Memorial catalog


title page

page 1

page 2

page 3

page 4


page 5

page 6

page 7
page 8



page 9

page 10


page 11


page 12


page 13

Sunday, October 14, 2018

গবেষণার টুকিটাকি



যারা গবেষণা করার ইচ্ছে পোষণ করেন, কিন্তু কিভাবে সেটা করবেন কুল-কিনারা করতে পারছেন না। তাদের জন্য এ লেখা। আর কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু সহজভাবে হঠাৎ মনে আসলো, কিন্তু পরে ভুলে যাওয়ায় মহা ঝামেলায় পড়তে হয়, সেজন্য এ লেখাটা ক্রমাগত চালিয়ে নেয়া, যাতে নিজেরও উপকার হয়।


গবেষণা আসলে মহা ধৈর্য্য আর কষ্টের কাজ। সুতরাং আপনাকে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে কাজে নামতে হবে। আপনি সময়, শ্রম, মেধা ও অর্থ ব্যয় করতে কোন কিপটেমি বা আলস্য করতে পারবেন না, তাহলে গবেষণার গরু খুজে পাবেন না। আসলেই এটা হারানো বস্তু খুঁজে বের করা এবং সত্যটাকে স্পষ্ট করা এবং সমাজের যাতে কোন কাজে লাগে সেটা বিবেচনায় নিয়ে তথ্য সংগ্রহ, মাঠ পর্যায় তথ্য অনুসন্ধান, বই, ক্যাটালগ, নমুনা, চিত্র, সাক্ষাতকার গ্রহণ ইত্যাদির মাধ্যমে গবেষণা প্রকল্পের ধরণ অনুযায়ী একটি অভিসন্দর্ভ রচনা করা মূল বিষয়।


আপনি যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জানেন এবং বিষয়টিকে ভালবাসেন, সেটা আপনার ক্যারিয়ারের সহায়ক হতে পারে বা না হতে পারে, কিন্তু দেশ জাতি ও মানবতা উপকৃত হবে, এটা আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে। যে দেশে যত বেশি গবেষণা হবে, সে দেশ তত এগিয়ে যাবে। এজন্য আপনাকে গবেষণা কর্মের মূল নীতিমালা জানতে হবে এবং এর টুকিটাকি অনুসরন করতে হবে। আপনি নেটে সার্চ দিয়ে মূলনীতি পেয়ে যাবেন এবং এ সংক্রান্ত বই কিনতে পাবেন। পুরোন বইয়ের বাজারে আপনাকে নিয়মিত যেতে হবে এবং এটা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। যেখানে আপনার গবেষণার তথ্য থাকতে পারে মনে করছেন, সেখানে না যাওয়া পর্যন্ত আপনি মনে তৃপ্তি পাবেন না, এ রকম বোধ আপনার গবেষণা কর্মকে বেগবান করবে। একটা তথ্যের জন্য আপনাকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়ার মানসিকতা যেমন রাখতে হবে, তেমনি বই-পত্র, সাময়িকী, নমুনা সংগ্রহে আপনাকে অকাতরে টাকা খরচের প্রস্তুতি থাকতে হবে।


বিশ্বের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কর্ম হয়ে থাকে। আপনি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গবেষণা করতে চাইলে, সেখানে নীতিমালা দেখে নিন, আপনি সেটার আওতায় পড়েন কি না। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং নীতিমালার শর্তগুলো পূরণ করে আবেদনের যোগ্য হলে, আপনার বিষয়ের একটি শিরোনাম ঠিক করে নিন, যেটা আগে কেউ করেনি, শিরোনাম ঠিক হলে একটা সার সংক্ষেপ তৈরি করে নিন, নেটে আপনি প্রচুর সংখ্যক সিনোপসিস বা সার সংক্ষেপ নমুনা পাবেন। আর এখন তথ্য প্রাপ্তির দিক দিয়ে ইন্টারনেট আপনাকে বিশাল সাপোর্ট দিবে, এ জন্য নেট থেকে তথ্য খুঁজে বের করার কাজে আপনাকে দক্ষ হতে হবে। তথ্য সংগ্রহ, বিন্যাস, যাচাই করণ এবং কম্পিউটার ব্যবহারে আপনাকে দক্ষ ও করিৎকর্মা হতে হবে। সার সংক্ষেপ তৈরি হলে, আপনাকে তত্ত্বাবধায়ক জোগাড় করতে হবে। এখানেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তবে হতাশ না হয়ে আপনাকে ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। স্বীয় ডিপার্টমেন্ট বা বিভাগ থেকে গবেষণা করা সহজ। তবে ভিন্ন বিভাগ থেকেও করা যায়, সেক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক রাজি হওয়াটা মূল বিষয়।


যাহোক আপনি গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করলেন, তত্ত্বাবধায়ক আপনাকে গবেষণার খুটিনাটি দেখাবেন আর আপনি তার কাছ থেকে যত বেশি নিতে পারবেন, আপনার কাজ তত সহজ হয়ে যাবে। তবে বই-পত্র ও আনুসাঙ্গিক বিষয়ে আপনাকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে, তা নাহলে কাজ শুরুর পর চারদিক অন্ধকার দেখা অনিবার্য হয়ে দাড়াবে। আপনি গবেষণা সহায়ক যে তথ্যই পান না কেন, সেটা নোট করে রাখবেন, আর বই ঘরে আনার পর সেটার একটা সার সংক্ষেপ করবেন, বইতে আপনার কাজে লাগার মত তথ্যগুলো পৃষ্ঠা নম্বরসহ নোট করবেন, যেটা কোট করতে হতে পারে বা অভিসন্দর্ভের কাজে লাগতে পারে বলে মনে করেন, সেটা হাই লাইট করে রাখবেন। মোট কথা গবেষণায় ব্যবহৃত বই-পত্তর আপনার নখ-দর্পণে থাকতে হবে।


ফিল্ড ওয়ার্ক বা মাঠ পর্যায়ের কাজে হয়ত মফস্বলে কোন ব্যক্তি, রিসোর্স পারসন বা লাইব্রেরি অথবা কোন পুরাকৃতি দেখতে এবং সেখান থেকে আপনাকে ছবি সংগ্রহ করতে হতে পারে, সেক্ষেত্রে ভাল পিক্সেলের ক্যামেরার একটা স্মার্ট মোবাইল এবং তাতে গবেষণা সহায়ক এ্যাপস নামিয়ে নিতে হবে, এ ছাড়া বেশি স্টোরেজের মেমরি কার্ড রাখতে হবে। মাঠ পর্যায়ের কাজে মনে করতে হবে, এখানে দ্বিতীয়বার আসার সুযোগ হয়ত হবে না, এজন্য পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে, কারণ আপনার গবেষণার সময় সীমিত।


আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলতি নিয়মে এবং আপনার বিশ্ববিদ্যালয় যে পদ্ধতিতে লেখা অভিসন্দর্ভ গ্রহণ করে সেটা জেনে নিতে হবে, তবে ব্যতিক্রমী বিন্যাসের এবং দৃষ্টি নন্দন দেখতে অভিসন্দর্ভ আপনাকে ভাইভা বোর্ডে এগিয়ে রাখবে পরীক্ষক মহোদয়গণের আনুকূল্য পেতে। কখনই অভিসন্দর্ভে কোন চালাকি বা ভুয়া রেফারেন্স দিবেন না, সৎ থাকবেন এবং নিজের মতকে বিনয়ের সাথে তুলে ধরবেন। মনে রাখবেন ভাইভা বোর্ডে আটকে গেলে আপনার পুরো গবেষণা কর্ম ব্যর্থ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আপনার তত্ত্বাবধায়ক হচ্ছেন আপনার রক্ষাকবচ, তিনি আপনার কাজে সন্তুষ্ট হলে আপনার ডিগ্রি হয়ে যাবে। কোন প্রশ্নের গোজামিল উত্তর ভুলেও দিতে যাবেন না। পরীক্ষকগণ আসলে যাচাই করতে চাইবেন যে অভিসন্দর্ভটি আপনার একান্ত পরিশ্রমের ফসল কি না, সুতরাং অভিসন্দর্ভের লাইন-বাই-লাইন এমন কি দাড়ি -কমা আর রেফারেন্স সম্পর্কে স্পষ্ট থাকতে হবে। রেফারেন্স বইয়ের লেখক সম্পর্কেও আপনার ধারণা থাকা প্রয়োজন। যে বই থেকে রেফারেন্স দিবেন, সেখানে লেখক যদি অন্য সোর্স কোট করেন, তখন আপনাকে মূল সোর্স দেখতে হবে। তথ্য ব্যবহারে আপনাকে সাবধান ও নির্মোহ হতে হবে, বায়াস তথ্য আপনার কাজ ও পরিশ্রম দুটোই ধ্বংস করে দিবে। সুতরাং একটি তথ্যের জন্য যত বেশি সোর্স পাবেন তত আপনার লাভ। একটা তথ্যও যেন ক্রস চেক ছাড়া ব্যবহার না হয়, সেটা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। গবেষণা কর্মে ব্যবহৃত ছবি আপনার নিজের সংগৃহীত হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং আপনার মোবাইলে তোলা ছবির মূল্য সবচেয়ে বেশি, যে ছবি আপনি নেট থেকে নিবেন সেটা ইউনিক এবং আপনার তথ্যের সাথে অপরিহার্য না হলে সেটা অবশ্যই বাদ দিবেন। আর ডায়াগ্রাম, লেখচিত্র ইত্যাদি অবশ্যই নিজে তৈরি করে দিবেন, কপি করবেন না। পরীক্ষক মহোদয় আপনার কাজকে ভাল করে যাচাই করবেন, সুতরাং আপনার সামান্য অসতর্ক পদক্ষেপ পুরো গবেষণাকে মাটি করে দেবে। ভাইভা বোর্ডে উৎরে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনি ডিগ্রি পেয়ে গেছেন, এরপর শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি থাকে। সুতরাং ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের আপনি সন্তুষ্ট করবেন আপনার আন্তরিকতা ও কর্ম দিয়ে, তত্ত্বাবধায়ক মহোদয় আপনাকে যে নির্দেশনা দিবেন, আপনি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন। সর্বোপরি আপনার কাজে সবসময় আল্লাহপাকের রহমত ও করুণা কামনা করবেন। আল্লাহপাক আপনাকে কামিয়াব করবেন।

Wednesday, September 5, 2018

Bangladesh Charushilpi Porishod

Bangladesh Charushilpi Porishod announce its Calligraphy Exhibition 2018. It held 10-22 November 2018 in Shlpakola Academy Gallery, Dhaka

আগের পোস্টার



আগের সার্টিফিকেট ডিজাইন

আগের আইডি কার্ড ডিজাইন


বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদ ২০১৮ সালে কয়েকটি কর্মসূচী পালন ও উদযাপন করেছে।
১. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালন উপলক্ষে চারুশিল্পী পরিষদ আইআইইউসি’তে বাংলা ক্যালিগ্রাফি সেমিনার, প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এতে ঢাকা থেকে মেহমান হিসেবে যোগ দেন ঢাকা চারুকলার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তার, পরিষদের সভাপতি ইব্রাহীম মন্ডল এবং সেক্রেটারি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুর রহীম।




২. ইফতার মাহফিল ও শিল্পী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান : ঢাকার গুলশানে একটি হোটেলে শিল্পীদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র রমজান মাসে।



৩. চারুশিল্পী পরিষদের উদ্যোগে ঢাকার গুলশানে সপ্তাহব্যাপী ক্যালিগ্রাফি  কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রশিক্ষক ছিলেন ইব্রাহীম মন্ডল, মাওলানা মোহাম্মদ আবদুর রহীম ও সাইফুল্লাহ সাফা। কর্মশালা উদ্বোধন করেন ঢাকা চারুকলার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তার এবং সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাচ্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ফকির।




৪. ২০১৮ সালে নভেম্বর মাসে ১২দিন ব্যাপী ক্যালিগ্রাফি 

Tuesday, July 10, 2018

Maszid Calligraphy in Bangladesh

Bangladesh is a land of beautiful heritage. Since 1204 A.D. here are established thousand of Maszid. The Maszid has beautiful  calligraphy and ornament. In a tradition, we continue make calligraphy. Recently, Bangladesh Calligraphy Foundation started to produce awesome calligraphy for Maszid.

The Sattar Maszid

In Vangnahati, roadside of Maona-Sripur of Gazipur district a grand maszid, locally named- Notun Maszid. A beautiful inlay calligraphy in all over the maszid. The biggest calligraphy project of Bangladesh Calligraphy Foundation. Calligrapher Mohammad Abdur Rahim started work in there 2010 and complete the work in 2016. There are a big volume of calligraphy from Turkish calligrapher Dr. Mozaffor Ahmed, grand ostad of Abdur Rahim and rest of calligraphy made by Abdur Rahim, The hole work of calligraphy resize, correction and implementation done by Abdur Rahim, Marble design Mihrab and wooden Mimber also designed by him.

South view


Masjid Calligraphy (Bangla language)



Sunday, July 1, 2018

হ্যান্ড রাইটিং ও ক্যালিগ্রাফি

জুমাবারের ক্লাসে আজ গোপালগঞ্জ থেকে এক ছাত্র এসেছিল, ক্লাস শেষে আবার সেখানে চলে যাবে। আরেকজন মেহমান ছিলেন এ্যাডভান্স হ্যান্ড রাইটিং স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলিপ স্যার। তিনি আমার খোঁজ পেয়েছেন কলকাতার আহমদ হ্যান্ড রাইটিংয়ের কাছ থেকে, তিনি ফোন দিয়ে ক্লাসে চলে আসলেন। কলকাতাসহ বাংলাদেশে তার কয়েকটি শাখা আছে হাতের লেখা সুন্দর করে শেখার। তার সাথে আলাপে অনেক বিষয় খোলাশা হল। তারা কী শেখান, কিভাবে শেখান, কেন শেখান, শেখাতে কত ফি নেন ইত্যাদি। তিনি আমার কাছ থেকে আমাদের ক্যালিগ্রাফি প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত অনেক কিছু জানলেন।
হ্যান্ড রাইটিং সুন্দর করার যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আছে, সেগুলো প্রধানত স্কুলের বাচ্চাদের হাতের লেখা দ্রুত এবং সুন্দর কিভাবে করা যায়, তা শিখিয়ে থাকে। পরীক্ষায় হাতের লেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ভাল হাতের লেখার খাতা বরাবরই বেশি নম্বর পেয়ে থাকে, পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে সুন্দর হাতের লেখার ছাত্রটি জীবনে সফল হয় অনায়াসে। তাই অভিবাবকগণ সব সময় এই দিকটিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। হাতের লেখা সুন্দর করার প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন পদ্ধতি নিজেদের মত বানিয়ে বাচ্চাদের লেখার তালিম দিয়ে থাকে। এই প্রশিক্ষকদের অধিকাংশই হাতের লেখা বিষয়ে কোন সনদধারী না হয়েও নিজের হাতের লেখা সুন্দর এবং অভিবাবকদের কনভিন্স করে প্রশিক্ষণ ক্লাসে বাচ্চা ভর্তি করে থাকেন। বাংলাদেশের সিংহভাগ শিক্ষিত লোকের বাজে হাতের লেখা এবং প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে একে গুরুত্বহীন রাখা হয়েছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অবহেলার শিকার হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজ্ঞতা কিংবা খামখেয়ালির কারণে।
হ্যান্ড রাইটিং শেখানোর বিষয়ে কেউ লেখা না জানা ব্যক্তি/বাচ্চাকে সেটা শেখান এবং লেখা সুন্দরের কৌশল দেখিয়ে দেন কিংবা বাজে হাতের লেখাকে কেউ শুধরানো ও সুন্দর করার কৌশল শেখান, এর জন্য প্রশিক্ষককে শিল্পী হওয়া আবশ্যক নয়, শুধু কায়দাটা জানা থাকলেই চলে। তবে শিল্পী হলে ছাত্রের জন্য বেশি সুবিধা হয়। হাতের লেখা শেখানোর পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটা পদ্ধতি দিলিপ স্যার ’ডি মেথড’ নাম দিয়েছেন, এটাতে একটি খাড়া রেখা ও সমতল রেখার পরস্পর ছেদ করে যে যোগ চিহ্ন হয়, সেটাকে সীমানা ধরে সব হরফ লেখা এবং হরফের ঘাত রেখা (একবারে যতটুকু লেখা যায়) চিহ্নিত করা হয়। হরফ লেখায় কোন রেখাটি ক্রমানুসারে লিখতে হবে এবং সেটা অবস্থান ও সীমা, এ পদ্ধতিতে তিনি দেখিয়ে থাকেন, পদ্ধতিটি একান্তই তার নিজের করা। এই লেখা শেখার উপকরণ একেবারেই সাধারণ ও সহজলভ্য ও দামে সস্তা। যেকোন বল পয়েন্ট কলম বা কালি বা জেল কলম আর সাদা অথবা রুল টানা কাগজ হলেই চলে।
ক্যালিগ্রাফি মূলত শিল্প সম্মত হরফের চিত্র। সুতরাং এতে শিল্পকলার বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত। উপায় ও উপকরণ নির্দিষ্ট ও তা আর্টের দোকানগুলোতে পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে সুন্দর হাতের লেখা শেখার পর তা কিভাবে শিল্পে রূপলাভ করবে সেটার প্রশিক্ষণ দেয়ার নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশে। চারুকলার প্রাচ্যকলা, গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ এবং বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি ফাউন্ডেশন ক্যালিগ্রাফি শিখিয়ে থাকে। ট্রেডিশনাল ও পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফির প্রশিক্ষণ একমাত্র বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি ফাউন্ডেশন শিখিয়ে থাকে। প্রাচ্যকলায় পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফি এবং গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগে টাইপোগ্রাফি শেখায়। এছাড়া অনিয়মিতভাবে পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফির কিছু ওয়ার্কশপ হয়ে থাকে। কিছুদিন আগে শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ ঢাকায় একটি ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং ওয়ার্কশপের আয়োজন করেন। বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদ আরেকটি ক্যালিগ্রাফির ট্রেডিশনাল ও পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফি ওয়ার্কশপের ঘোষণা দিয়েছে। ঢাকার গুলশানে সেটা হবে।
ক্যালিগ্রাফি ট্রেডিশনাল পদ্ধতিতে শেখার জন্য “কত্ বা নোকতা পদ্ধতি” আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত ও স্বীকৃত। এটা মুসলমানদের একান্ত আবিস্কার ও ঐতিহ্য। হাজার বছর ধরে এ পদ্ধতিতে ক্যালিগ্রাফি শেখানো হচ্ছে। বাংলা ক্যালিগ্রাফির ট্রেডিশনাল ধারাটিও এ পদ্ধতিতে শেখানো হয়। এর সাথে হরফকে নান্দনিক বা লাবণ্যযোজন করা হয় বৃত্ত পদ্ধতি এবং সাদৃশ্য পদ্ধতি প্রয়োগে। শিল্পের ষড়ঙ্গ যেটা প্রাচ্যকলায় একটি অবিচ্ছেদ্য বিষয়, তা ক্যালিগ্রাফিতেও সমানভাবে প্রযোজ্য। সুতরাং ক্যালিগ্রাফি শিখতে হলে আপনাকে একজন ক্যালিগ্রাফার ওস্তাদ খুজে বের করতে হবে এবং আপনাকে যথেষ্ট সময়, পরিশ্রম ও সাধনা করতে হবে। ক্যালিগ্রাফার হওয়ার কোন সর্টকার্ট রাস্তা নেই। ভাল হাতের লেখা শিখে আপনি জীবন যাপনে সুবিধা পাবেন আর ক্যালিগ্রাফি শিখে আপনি শিল্পী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পাবেন এবং এলিট শ্রেণির সম্মান লাভ হবে। শিল্পের যে তৃষ্ণা, তা আপনি মেটাতে পারবেন ক্যালিগ্রাফি শিখে। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একজন ক্যালিগ্রাফারের যে খ্যাতি তা আপনাকে অভিভূত করবে, যখন আপনি একজন ক্যালিগ্রাফার হবেন।

Wednesday, May 30, 2018

।।উসামা ও শায়খ অদাহ’র গল্প ।। ক্যালিগ্রাফির প্রাচীন দোয়াত ও কাগজের মাপ কেমন ছিল?




উসামা যখন ঘরে প্রবেশ করল, সে সময় তার উস্তাজ শায়খ অদাহ ক্যালিগ্রাফির নতুন একটি লাওহা বা শিল্পকর্ম তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন, তিনি মাথা না তুলে শুধু চোখ তুলে তাকালেন আর মুচকি হেসে বললেন, উসামা! বৎস আমার! স্বাগতম!


- প্রিয় উস্তাজ! আল্লাহপাক আপনার সকালকে সৌভাগ্যে ভরিয়ে দিন! মনে হচ্ছে, এই চমৎকার শিল্পকর্মটি “লাওহা তাতির” (সূক্ষ্ম পরিমাপের)?


- না, এটার পাশে ছাত্ররা আরবি ফুল-লতার নকশা আঁকবে, যাতে সেটা আরো নয়নাভিরাম হয়। বৎস! আজকে একটু আগে-ভাগেই এলে যে!


- উস্তাজি আপনার সান্নিধ্য আমাকে প্রতিদিনই এভাবে টেনে আনে। আজকে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর পেতে আমার মন উতলা হয়ে আছে!


- বৎস! বলো, কি জানতে চাও?


- গতকালের আলোচনা ক্যালিগ্রাফারের দোয়াত ও কাগজের পরিমাপের পর্যায়ে এসে শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমার ধারণা ছিল, শুধু মিহবারাহ বা কালির পাত্রকে দোয়াত বলে, অথচ এর আরও ব্যাপক বিষয় আছে!


- আর কোন প্রশ্ন?


- উস্তাজি! প্রাচীন বাবেল বা ব্যাবিলনীয় কাগজের পরিমাপ ও সেটার ব্যবহার নিয়ে কিছুই জানি না, ফরাসি ও ইংরেজি কাগজের পরিমাপ আবিস্কারের আগে তা কেমন ছিল আর কিভাবে তা আমাদের কাছে এলো?


- শায়খ, মৃদু হেসে শিল্পকর্ম থেকে মাথা তুললেন এবং সেটা রোল করে তাকের ওপর রাখলেন, তারপর বললেন এটা অনেক লম্বা আলোচনা আর তোমার এই অনুসন্ধিৎসাকে আমি বাধা দিতে চাই না, আল্লাহ পাক চাইলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাই!


- বলুন ওস্তাদজি, অধীর আগ্রহ নিয়ে আমি তা শুনতে চাই!


- ইলমি আভিধানিক অর্থে দোয়াত এমন একটি “আদাত” শব্দ, যাতে কালি সংরক্ষণ ও লেখার সরঞ্জামাদি একত্রে বুঝায়। আর পরিভাষায়- লিখতে যা যা লাগে সবকিছুকে একসাথে দোয়াত বলে। শব্দটির বহুবচন দুইয়াত/দুইয়ি/দুইয়্যু। দোয়াত নামবাচক শব্দটি দাওয়া থেকে উৎসারিত। কেননা কাতিব লেখার মেরামতি এ সরঞ্জামসমূহের মাধ্যমে করে থাকেন, যেমন দাওয়া বা ওষুধ দিয়ে দেহের চিকিৎসা করা হয়। সাহিত্যে বলা হয়, উপকারী হাতিয়ার হচ্ছে দোয়াত। এজন্য আরব মুসলমানেরা দোয়াতকে বিস্তারিত অর্থে কিংবা শুধুমাত্র কালির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। যেখানে যে অর্থে ব্যবহার হয়, সেখানে সেভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন মসজিদে বা ইলিম চর্চার মজলিসে কতজন ছাত্র আসে তা বের করতে কালির পাত্রগুলো(মাহাবির) গুনে দেখার কথা বলা হয়েছে, ছাত্রত্বের পরিচয় হচ্ছে, প্রত্যেক ছাত্র স্বীয় কালির দোয়াত সাথে নিয়ে আসবে।


- মনে হয় শুধু একটি সরঞ্জাম ছাত্রের সাথে থাকতো না?


- হ্যা, দোয়াত শব্দ দ্বারা প্রায় সতেরটি সরঞ্জামের সমাহার বুঝায়।


- উস্তাদজি, সেগুলো কি একটু খোলাশা করে বলবেন?


- শোন বলছি, “আল-মাকলামাহ” হচ্ছে কলমদানির নাম। যাকে কলম রাখা হত। “মিহবারাহ” হচ্ছে কালির পাত্রের নাম। সেটা দু’ধরণের হতে পারে। এক. বড় কালির পাত্র, যাতে বেশি কালি সংরক্ষণ করা যায় আর অন্যটি ছোট আকারের কালির দোয়াত, যাতে কলম চুবিয়ে লেখার কাজ চালানো হয়। ওজনে হালকা হওয়ায় ছোট দোয়াতটি ক্যালিগ্রাফারের সাথে সবসময় থাকত। “আল-জাওনা” যা “আল-মালিক্ক” নামেও পরিচিত, ছোট অবয়বের কিন্তু বড় মুখের পাত্র, যাতে “লিকা” দিয়ে কালি রাখা হত। আর “লিকা” হচ্ছে রেশম সুতার দলা। যা দোয়াতে রাখলে কলমে সুষম কালি উঠে ও কলমের মাথা ভাল থাকে। কালি শুকিয়ে গেলে একটু পানি দিয়ে যে কাঠি দিয়ে লিকা নড়া-চড়া করে পুণরায় লেখার উপযোগী করা হয়, ঐ কাঠিকে “আল-মিলওয়াক্ক” বলে। কিতাবকে সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ ধরণের মাটির মিহি গুড়াকে “আল-মারমালাহ” বলে। কিতাবে কালি চুষে নেয়া ও কালির স্থায়িত্ব দিতে আঠালো বস্তু দিয়ে প্রলেপ দেয়াকে “আল-মানশায়াত” বলে। “আল-মেনফায” হচ্ছে কাগজকে মসৃণ করার হাতিয়ারের নাম। ছোট্ট পানির শিশি বা পাত্রকে “আল-সুকাত” বলে, লেখার দোয়াতের কালি শুকিয়ে গেলে সুকাত থেকে কয়েক ফোঁটা পানি দিয়ে কালির ঘনত্ব ঠিক রাখা হয়। কলমের মাথা যে পাতের ওপর রেখে ছুরি দিয়ে চেরা হয়, ঐ পাতটিকে “আল-মাক্তা” বলে। কাগজের মাথার দিক চেপে রাখা বা আঁকড়ে ধরার হাতিয়ারকে “আল-মিলজামাহ” এবং কলম রাখার জন্য ছোট আকৃতির রেশম বা উলের কাপড়খন্ডকে “আল-মুফরাশাহ” বলে। লেখার কাজ শেষ হলে কলম ‍ মোছা ও পরিস্কার করার কাপড়খন্ড বা টিস্যু জাতীয় কাগজকে “আল-মুমাস্সাহাহ” বলে। লেখার লাইন বা দাগ টানতে কাঠের রুলারকে “আল-মিস্তারাহ” বলে। আর কাগজে সোনার কালিকে চকচকে করতে মসৃণ পাথর লাগানো হাতিয়ারকে “আল-মিসক্কিলাহ” এবং ক্যালিগ্রাফি করার উপযোগি বিশেষ ধরণের কাগজকে “আল-মাহরাক্ক” বলে। এগুলো সবই দোয়াতের অংশ। এছাড়া ছুরি ধার বা শান দেয়ায় হাতিয়ার “আল-মাসান” এবং খাগের ক্যালিগ্রাফি কলম “আল-মিজবার”ও দোয়াতের অন্তর্ভূক্ত।


- উস্তাদজি, দোয়াত তৈরির উপকরণ কি কি?


- বিভিন্ন খনিজ ও ধাতব বস্তু দিয়ে, যেমন- সোনা, রূপা বা প্রাণীজ ও উদ্ভিজ উপকরণ দিয়ে দোয়াত তৈরি করা হয়, বিভিন্ন জাদুঘরে তার প্রাচীন নমুনা সংরক্ষণ করা আছে।


- অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই আপনাকে। প্রাচীণ কাগজের পরিমাপ কিভাবে করা হত?


- এ বিষয়ে কলকশান্দির উক্তি স্মরণ করা যেতে পারে হে বৎস! বাগদাদের প্রাচীন কাগজের পূর্ণমাপ ছিল নয় ধরণের। দৈর্ঘে-প্রস্থের দ্বিগুণ, মিশরিয় কাপড় পরিমাপের একহাত পরিমান। আর লম্বায় দেড়হাত পরিমান। আর বাগদাদি নাকেচ বা খাটো মাপের কাগজ হচ্ছে দৈর্ঘ্য থেকে প্রস্থ চার আঙ্গুল কম হবে। দুই তৃতীয়াংশ মাপের মিসরি কাগজ পূর্ণ মানসুরি মাপের কাগজের এক তৃতীয়াংশ তুমার মাপের এবং প্রস্থ হবে হাতের এক তৃতীয়াংশ বরাবর। নিসফ মাপের কাগজ হচ্ছে মানসুরি তুমার মাপের অর্ধেক আর প্রস্থেও আধা হাত। সুলুস মাপের কাগজ মানসুরি এক তৃতীয়াংশ এবং প্রস্থেও হাতের এক তৃতীয়াংশ মাপের হওয়া। আর প্রসিদ্ধ মানসুরি মাপটি হচ্ছে প্রস্থে হাতের এক চতুর্থাংশ হওয়া। সগির মাপটিকে “আল-আদাহ” বলে, এটি প্রস্থে এক হাতের এক ষষ্ঠমাংশ পরিমাপের হবে। সিরিয়া বা শাম দেশের পূর্ণ মাপের কাগজ তুমার দৈর্ঘ্য হবে প্রস্থের দ্বিগুণ। সামি সগির মাপটি “ওয়ারাক তোইর” নামে বেশি পরিচিত। এতে তিন আঙ্গুল বরাবর প্রস্থ হবে আর এটা কবুতর ডাক বা পকেট সাইজ কিতাব লেখার কাজে ব্যবহৃত হত। সরকারি কাজে সিরিয়ায় প্রাচীনকালে চার মাপের কাগজ ব্যবহার করা হত। পুর্ণ মাপটি হচ্ছে, তুমার মাপের প্রস্থের দ্বিগুণ হবে দৈর্ঘ্য। আর নিসফ হামুবি হবে প্রস্থের দ্বিগুণ হবে দৈর্ঘ্য তুমার হামুবি। শামি আদাহ হচ্ছে তুমার মাপের দৈর্ঘ্যের এক ষষ্ঠমাংশ কম প্রস্থ । আর ওয়ারাক তোইর প্রস্থে তিন আংগুল বরাবর। (বাগদাদের বিশিষ্ট্য ক্যালিগ্রাফার ছায়ের শাকের তিরকিযির লেখার ভাবানুবাদ, ২০১৮ই.)


- মোহাম্মদ আবদুর রহীম, এমফিল, প্রাচ্যকলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Monday, May 21, 2018

Sulus Calligraphy book

A new Calligraphy book, i wrote for student and reader. The name of the book is "Sulus Lipishail" in Bangla language.







Monday, April 9, 2018

ক্যালিগ্রাফির এক মহান উস্তাদ



১৯৯০ সালের প্রথম দিকের কথা। সম্ভবত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ হবে। আমি বায়তুল মোকারমের নিচতলার মার্কেটে মার্বেল হাউজ নামের একটি দোকানে পাথরে ডিজাইনের কাজ করি। জোহরের সালাত আদায় করে এসে দেখি, ২’ বাই ৩’ একটি মার্বেল পাথরে চমৎকার আরবি ক্যালিগ্রাফিতে একটি মসজিদের নাম পেন্সিলে লেখা। সেটা খোদাই ও রঙ করে দিতে হবে। ক্যালিগ্রাফি দেখে এতই অভিভূত হলাম যে ক্যালিগ্রাফারকে তখনই দেখতে ইচ্ছে হল। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের অপর পাশে দারুল ফুনুন গেলে তাকে দেখতে পাওয়া যাবে। সব কাজ ফেলে সেখানে গেলাম। গিয়ে জানলাম তিনি আছর বাদ আসবেন কিংবা এসে আবার কোথাও কাজ থাকলে চলেও যেতে পারেন। সুতরাং দুপুরের খাওয়া ভুলে সেখানে বসে থাকলাম। আছর পড়ে দ্রুত আবার ফিরে আসলাম। কিছুক্ষণ পরে সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পরা নুরানি চেহারার এক মাওলানা সাহেব এলেন। তাকে দেখেই মনে হল ইনিই ক্যালিগ্রাফির উস্তাদ। প্রথম দেখায়ই তাকে অনেক আপন মনে হল। পরিচয়ের পর খাবার আনালেন আর এত বিনয়ের সাথে কথা বললেন তাতে আমার খুব লজ্জা হচ্ছিল। সেই থেকে শুরু। একনিষ্ঠ সাগরেদ বনে গেলাম। সকালে খাতা কলম নিয়ে হাজির হই, সারাদিন দরস আর মশক। এভাবেই দিন গড়িয়ে গেল।


আমার মুহতারাম উস্তাদ শহীদুল্লাহ এফ. বারী শৈশবে পাকিস্তানে দীনি ইলম হাসিলের পাশাপাশি আরবি উর্দু খোশখত-এর প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন। এরপর সৌদি আরবে মদিনায় আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে ক্যালিগ্রাফিতে ডিপ্লোমা লাভ করার জন্য ভর্তি হন। নানা প্রতিকুলতা ও অসুবিধা সত্ত্বেও এক বছর পর্যন্ত অত্যন্ত সফল ও মুমতায রেজাল্ট করেন। শিক্ষকগণ তাকে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্বর্ধনা প্রদান করেন। এ সময় ‘নাশখি’ শৈলিতে একটি কম্পিউটার ফন্ট তৈরি করেন, যেটা অনুমোদিত ও সৌদি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব ফন্ট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সৌদি সরকার তার ভিসা নবায়ন না করায়, ডিপ্লোমা শেষ না করেই দেশে ফেরত আসেন। তবে ছয়টি গোলায়িত শৈলি সুলুস, নাশখ, দিউয়ানী, তালিক, রিকা ও মুহাক্কাক ক্যালিগ্রাফির ইযাযা, ফৌজি সালেম আফিফির কাছ থেকে লাভ করেন। বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির একাডেমিক সনদ একমাত্র ও প্রথম তারই ছিল। পরে এ ছয়টি শৈলিতে উস্তাদ শহীদুল্লাহ এফ. বারীর কাছ থেকে ইযাযা সনদ একমাত্র এ নগন্য সাগরেদ মোহাম্মদ আবদুর রহীম লাভ করি। তিনি ছাত্রদের ভাল হাতের লেখা শেখার জন্য খত রুকাহ শৈলিতে একটি মুফরাদাত কাওয়ায়েদ রচনা করেন। ২০০৬ সালে সুলুস শৈলিতে তিনি এবং নাশখ শৈলিতে আমি মোহাম্মদ আবদুর রহীম এবং রঙের বিষয়ে ইব্রাহীম মন্ডল যৌথভাবে একটা হাতে-কলমে কিতাব রচনা করি। ঐ একই বছর নাশখ শৈলিতে অন্য একটি কিতাব আমি রচনা করি, উস্তাদ শহীদুল্লাহ এফ. বারী কিতাবটি অত্যন্ত যত্ন নিয়ে সংশোধন করে দেন এবং আমাকে দোয়া করেন। এরপর ২০০৯ সালে সুলুস লিপিতে একটি কাওয়ায়েদ রচনা করি এবং সেটিও তিনি যথাযথ পরামর্শ এবং একটি মূল্যবান অভিমত লিখে দেন। এই কিতাব রচনার জন্য তিনি বিশেষভাবে একরাতে তাঁর বাসায় দাওয়াত দেন এবং খানাপিনার পর হাদিয়াসহ দোয়া করেন।


উস্তাদের সাথে কয়েকটি দেশী ও বিদেশী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। প্রতিবারই ক্যালিগ্রাফির শৈলি বিষয়ে তাঁর পরামর্শ ছিল আসমান সমান। ২০১৩ সালে ওআইসির কালচারাল বিভাগ ইরসিকা কর্তৃক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করায় তিনি অত্যন্ত খুশি হন এবং যথারীতি দাওয়াত দেন। তাঁর বাসায় গেলে খুশিতে জড়িয়ে ধরেন এবং আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। সেই দিন মনে হয় আমি তাঁর ক্যালিগ্রাফির ফায়েজ লাভ করি।


উস্তাদজি ছিলেন বাংলাদেশে আরবি ভাষা শিক্ষা প্রদানে এক উজ্জল নক্ষত্র। তাঁর ভাষা শিক্ষার ক্লাসে অংশ নিয়েছেন এমন বহু রত্ন দেশে বিদেশে ছড়িয়ে আছেন। এ বিষয়ে তিনি কয়েকটি কিতাব লিখেছেন। একদিন বিকেলে তিনি ফোন করে মোহাম্মদপুরের মারকাজে যেতে বললেন। আদেশ পাওয়া মাত্র মোটরবাইক নিয়ে রওনা হলাম। পথে প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে মারকাজে হাজির হলাম। তিনি আমাকে এ অবস্থায় দেখে দোয়া করলেন এবং তাঁর লেখা ভাষা শিক্ষার বইগুলো হাদিয়া দিলেন।


তিনি বাংলাদেশ সরকার এবং ওআইসির জন্য অনেক কিতাব আরবিতে অনুবাদ করে দিয়েছেন। তাঁর আরবি অনুবাদ এত উচ্চমানের ছিল, যা সৌদি বিশ্ববিদ্যালয় ফারেগ বহু প্রখ্যাত আলিম প্রশংসা করেছেন। তিনি আমৃত্যু সৌদি সামরিক এটাশে ঢাকার প্রধান অনুবাদক এবং খাত্তাত হিসেবে কর্মরত ছিলেন। উস্তাদের দোয়ার বরকতে আল্লাহপাক আমাকে সৌদি রিলিজিয়াস এটাশে ঢাকার খাত্তাত হিসেবে কবুল করেছেন।


উস্তাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল দেশে একটি ক্যালিগ্রাফির ইনস্টিটিউট গড়ে উঠবে। ক্যালিগ্রাফি মিউজিয়াম, গ্যালারি ও আরকাইভ প্রতিষ্ঠিত হবে। তাঁর সেই স্বপ্ন আমরা সাগরেদকুল হৃদয়ে দৃঢ়ভাবে লালন করছি এবং চেষ্টা অব্যাহত রেখে চলেছি। ২০১৬ সালের ১৪ এপ্রিল ভোরে তিনি মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালায় ডাকে সাড়া দিয়ে ইন্তেকাল করেন। আল্লাহপাক তাঁকে জান্নাতের আ’লা মাকাম দান করুন। আমীন। - মোহাম্মদ আবদুর রহীম

Featured Post

Calligraphy Class started for Biggeners

I started new year Calligraphy Class. Today is 2nd class. Any person of no boundary on ages, can learn calligraphy, if he or she interes...