ক্যালিগ্রাফি শিল্পের পাশ ফেরা :
গত শতকের শেষ দশকে ক্যালিগ্রাফি শিল্পের জগতে যে চমকপ্রদ ঘটনাগুলো ঘটেছিল, তার একটি হচ্ছে মু'য়াল্লা/মোয়াল্লা নামে একটি শৈলীর উত্থান। ১৯৯৬ সালে তেহরানের ক্যালিগ্রাফার হামিদ আল আযামী আন্তর্জাতিকভাবে মু'য়াল্লা শৈলিটির স্বীকৃতি লাভ করেন। তিনি এটা কুফি মাশরেকি এবং সিকাস্তে শৈলির সমন্বয়ে বানিয়েছেন বলে প্রামাণ্য বই তৈরি করে দেখান। যদিও ২০০৯ সালে আমার তেহরান সফরকালে তিউনেসিয়ার উস্তাদ ইয়াসিন মাতির শৈলিটির জনক হিসেবে আযামীকে সন্দেহ প্রকাশ করেন, কারন মাগরেবি সুলুস ও মাবসুত শৈলিতে মুয়াল্লার অধিকাংশ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, তাই এটার পিতৃভূমি হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকার আরব দেশসমূহ। উস্তাদ মাতির তার মতের সপক্ষে কিছু কাজও দেখান। যেহেতু শৈলিটি নতুন এবং এর কারুকাজ সবাইকে আলোড়িত করেছে, আর আমাকেও তা এতটা প্রভাবিত করেছিল, যে তেহরান সফরের আগে এক রাতে মুয়াল্লা শৈলির একটি বই তৈরি করে সাথে করে তেহরানে নিয়ে গেলাম এবং আযামীকে দেখানোর মওকা খুঁজছিলাম, তিনি তেহরানের বাইরে থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। তবে উস্তাদ মাতিরসহ কয়েকজন বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার বইটির প্রশংসা করেন এবং শৈলির কিছু ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্যের জন্য সেটার নাম প্রস্তাব করেন "মুয়াল্লা রহীমী" বলে। দেশে ফিরে শৈলিটির উৎকর্ষ ও উন্নয়নে যথেষ্ট সময় দেয়া হয়নি। অবশ্য ২০১২ সালে এটা বেশ আকর্ষনীয় একটি শৈলি হিসেবে বাংলাদেশে পরিচিতি পায়। শিল্পী আরিফুর রহমানের মুয়াল্লা শৈলির কাজ এসময় সবার নজর কাড়ে। আমি এটার শৈল্পিক অবস্থান নিয়ে কোন সমস্যা দেখিনি, যে কেউ একটু যত্নশীল হলেই শৈলিটিতে কাজ করতে পারেন। কলমে ও পেইন্টিংয়ে এটা খুব মজার একটা শৈলি। আমার এক সময়ের রূমমেট এবং সুহৃদ ভাই ও ডাক্তার ভাবি এই শৈলিতে অনেকগুলো পেইন্টিং নিয়েছেন, বলা যায় তাদের আগ্রহ ও চাপাচাপিতে শৈলিটির প্রতি আলাদা নজর দিতে হয়েছে। শৈলিটিতে বেঙ্গল স্কুল বা ধারা করতে হলে, অন্তত কয়েক ডজন মাস্টারপিস বের হওয়া দরকার, এটা এক দুজনের এ্যামেচার কার্যক্রমে হবে না, আমাদের একদল পেশাদার ক্যালিগ্রাফার লাগবে, যারা কলম চালনায় সামুরাই মাস্টার হবেন। তবে শৈলিটিতে কিছু নতুনত্ব যোগ করা আবশ্যক। সেজন্য কলমের পারদর্শিতা কে দেখাতে পারবেন, আমরা তার অপেক্ষায় আছি।
No comments:
Post a Comment